১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ-ক্রোয়েশিয়া ছিল একই মানের ফুটবল দল আপনি কী জানেন? দুই যুগ আগে বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়া একই মানের দল ছিল। ১৯৯৩ সালে ফিফা র্যাংকিংয়ে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ১১৬, বাংলাদেশের ছিল ১১৯। ব্যবধান ছিল মাত্র ৪। ২৫ বছর বছরের ব্যবধানে ক্রোয়াটরা বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেখানে বিশ্বকাপ তো দূরের কথা, এশীয় পর্যায়েও বেঙ্গল টাইগারদের দাপট নেই। এশিয়ান কাপে একবারই খেলে তারা। তাও সেই ১৯৮০ সালে। সেবার গ্রুপ পর্বেই বিদায়ঘণ্টা বাজে।
ওই বছরই প্রথম চালু হয় ফিফা র্যাংকিং। পরের গল্পটা কমবেশি সবারই জানা। এরপর শুধুই এগিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপীয় অঞ্চলের নামকরা কয়েকটি দলকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয় ১৯৯৮-ফ্রান্স বিশ্বকাপে। প্রথমবার খেলতে এসেই সবাইকে চমকে দেয় দলটি। বাঘা বাঘা দলকে টপকে হয় তৃতীয়। পরেও সেই ধারা বজায় থাকে। মাঝে একবার শুধু কোয়ালিফাই করতে পারেনি তারা। সব মিলিয়ে পঞ্চমবারের মতো ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে খেলতে এসে বিশ্বজয় করল দ্য ব্লাজার্সরা।
তবে ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্নযাত্রার শুরুটা হয় এরও আগে। ১৯৯৬ সালে তারা স্থান করে নেয় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। প্রথম দর্শনেই বাজিমাত। প্রথমবার অংশ নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে তারা। ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টেও পাঁচবার খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো শেষ আটে জায়গা করে নেয় তারা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েছে তো পিছিয়েছেই। যোজন যোজন পিছিয়ে পড়েছে ব-দ্বীপের দেশটি। ২০০৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কাজী সালাউদ্দিন। তখন র্যাংকিং ছিল ১৮০। ২০১১ সালে সেটি সর্বোচ্চ ১৩৮ হলেও ক্রমান্বয়ে ফের পিছিয়েছে। পেছাতে পেছাতে এখন তলানিতে। ১৯৪তম স্থান নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ। আর ২০ নম্বরে থেকে বিশ্ব আসরে ফুটবল রোমান্টিকদের মাত করল ক্রোয়েশিয়া।
২০০৩ সালে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সেটিই সর্বোচ্চ সাফল্য। এরপর আর এগোতে পারেনি। এশীয় পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করা দূরে থাক, সাফেও চলে গেছে তলানিতে। একসময় এতে নিয়মিত শেষ চারে খেলত বাংলাদেশ। আর এখন মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান, এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও জিততে পারে না। পড়শি দেশ ভারত চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল এগিয়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার কারণগুলো স্পষ্ট। ইউরোপিয়ান দেশটির ফুটবল অবকাঠামো এবং আমাদের অবকাঠামোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তারা তৃণমূল থেকে ফুটবলার খুঁজে বের করেছে। আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ। এখন তো জেলাগুলোতেই লিগ হয় না। স্কুল থেকে তো উঠে গেছে বললেই চলে।